ঢাকা ১০:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা ভোটার তৈরিতে সোনাইমুড়ী এখন হটস্পট

সোনাইমুড়ী প্রতিনিধি

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি চক্রের দৌরাত্ম্য আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই চক্র বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের জন্য ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করে চলেছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। স্থানীয় প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদ কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এই চক্র সক্রিয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ৩ জুন সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভোটার হতে এসে দুই দালালসহ আটক হয় রোহিঙ্গা যুবক নুরুল আমিন। তার ভুয়া জন্ম নিবন্ধন ধরা পড়ার পর সোনাইমুড়ী থানায় মামলা হলে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

 

জানা গেছে, ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি চক্রের অন্যতম সদস্যরা হলেন সোনাইমুড়ী পৌর এলাকার কৌশল্যারবাগের সাইমন, আজাদ, ভাওরকোট গ্রামের শফিকুল্লাহর ছেলে বেলায়েত হোসেন এবং মজিবুল হকের পুত্র সেলিম।

 

আটকের ঘটনায় নির্বাচন অফিসার শাহাজাহান মামুন বাদী হয়ে রোহিঙ্গা নাগরিক, নদনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজগর হোসেন, জয়াগ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহিন উদ্দিনসহ ৭ জন দালালকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এর কিছুদিন পরই গত ২৯ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন আক্তারের স্বাক্ষর জাল করে তৈরি করা জন্ম নিবন্ধন নিয়ে ৪ যুবক ভোটার হতে এলে তাদের আটক করা হয়। তবে অবাক করা বিষয় হলো, ইউএনও নাসরিন আক্তার তাদের জেল না দিয়ে কেবল নগদ অর্থ জরিমানা করে ছেড়ে দেন, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ধরনের লঘু শাস্তির কারণে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

 

এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সোনাইমুড়ীর বিভিন্ন বাজারের কম্পিউটার দোকানগুলো জেলা পৌরসভা এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন বয়স বাড়িয়ে বা কমিয়ে তৈরি করে দিচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই কাজে উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারী, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এবং কম্পিউটার দোকানের মালিকরা জড়িত। তারা প্রতিটি সনদ তৈরিতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন।

 

নদনা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজগর হোসেন স্বীকার করে জানান, নাম-ঠিকানা পরিবর্তন করে এবং অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কম্পিউটারে এডিটিং করে অহরহ ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি হচ্ছে। তার দাবি, এ কারণে রোহিঙ্গা নাকি স্থানীয়, তা বুঝা মুশকিল হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি তার ইউনিয়ন পরিষদের ওভাররাইটিং জন্ম নিবন্ধন নিয়ে এক রোহিঙ্গা যুবক ভোটার হতে গিয়ে আটক হলে তাকেও মামলায় আসামি করা হয়।

 

স্থানীয় রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, ইউএনও-এর স্বাক্ষর জাল করার মতো গুরুতর অপরাধে কেবল জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়াটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই ধরনের দুর্বল পদক্ষেপের কারণে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন তিনি। প্রশাসনের এই নমনীয়তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সোনাইমুড়ীতে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি চক্রের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে এবং এর ভয়াবহ পরিণতি জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এই স্থানীয় রাজনীতিবিদ।

 

স্থানীয় বাসিন্দ কবির হোসেন জানান, একজন নির্বাহী মেজিস্ট্রেডের স্বাক্ষর জাল করার অপরাধে জেল না দিয়ে জরিমানা করাতে এলাকার মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে, অপরাধীর একজনের ৫ হাজার টাকা ও ৪ জনের ২০ হাজার টাকা করা জরিমানা করা হয়েছে। আগামী দিন আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে সোনাইমুড়িতে, যেখানে একজন নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করার মত এত অপরাধ করেও সামান্য জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার জানিয়েছেন, তার স্বাক্ষর জাল করে জন্ম নিবন্ধন তৈরি করায় ৪ যুবককে আটক করা হয়েছিল এবং তাদের জরিমানা করা হয়েছে।

 

তিনি জানান, সোনাইমুড়ী বাজারের কম্পিউটার দোকানগুলোর মালিকরা ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরির সঙ্গে জড়িত এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১০:৩৯:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
৬ বার পড়া হয়েছে

রোহিঙ্গা ভোটার তৈরিতে সোনাইমুড়ী এখন হটস্পট

আপডেট সময় ১০:৩৯:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি চক্রের দৌরাত্ম্য আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই চক্র বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের জন্য ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করে চলেছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। স্থানীয় প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদ কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এই চক্র সক্রিয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ৩ জুন সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভোটার হতে এসে দুই দালালসহ আটক হয় রোহিঙ্গা যুবক নুরুল আমিন। তার ভুয়া জন্ম নিবন্ধন ধরা পড়ার পর সোনাইমুড়ী থানায় মামলা হলে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

 

জানা গেছে, ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি চক্রের অন্যতম সদস্যরা হলেন সোনাইমুড়ী পৌর এলাকার কৌশল্যারবাগের সাইমন, আজাদ, ভাওরকোট গ্রামের শফিকুল্লাহর ছেলে বেলায়েত হোসেন এবং মজিবুল হকের পুত্র সেলিম।

 

আটকের ঘটনায় নির্বাচন অফিসার শাহাজাহান মামুন বাদী হয়ে রোহিঙ্গা নাগরিক, নদনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজগর হোসেন, জয়াগ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহিন উদ্দিনসহ ৭ জন দালালকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এর কিছুদিন পরই গত ২৯ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন আক্তারের স্বাক্ষর জাল করে তৈরি করা জন্ম নিবন্ধন নিয়ে ৪ যুবক ভোটার হতে এলে তাদের আটক করা হয়। তবে অবাক করা বিষয় হলো, ইউএনও নাসরিন আক্তার তাদের জেল না দিয়ে কেবল নগদ অর্থ জরিমানা করে ছেড়ে দেন, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ধরনের লঘু শাস্তির কারণে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

 

এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সোনাইমুড়ীর বিভিন্ন বাজারের কম্পিউটার দোকানগুলো জেলা পৌরসভা এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন বয়স বাড়িয়ে বা কমিয়ে তৈরি করে দিচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই কাজে উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারী, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এবং কম্পিউটার দোকানের মালিকরা জড়িত। তারা প্রতিটি সনদ তৈরিতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন।

 

নদনা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজগর হোসেন স্বীকার করে জানান, নাম-ঠিকানা পরিবর্তন করে এবং অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কম্পিউটারে এডিটিং করে অহরহ ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি হচ্ছে। তার দাবি, এ কারণে রোহিঙ্গা নাকি স্থানীয়, তা বুঝা মুশকিল হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি তার ইউনিয়ন পরিষদের ওভাররাইটিং জন্ম নিবন্ধন নিয়ে এক রোহিঙ্গা যুবক ভোটার হতে গিয়ে আটক হলে তাকেও মামলায় আসামি করা হয়।

 

স্থানীয় রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, ইউএনও-এর স্বাক্ষর জাল করার মতো গুরুতর অপরাধে কেবল জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়াটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই ধরনের দুর্বল পদক্ষেপের কারণে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন তিনি। প্রশাসনের এই নমনীয়তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সোনাইমুড়ীতে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি চক্রের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে এবং এর ভয়াবহ পরিণতি জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এই স্থানীয় রাজনীতিবিদ।

 

স্থানীয় বাসিন্দ কবির হোসেন জানান, একজন নির্বাহী মেজিস্ট্রেডের স্বাক্ষর জাল করার অপরাধে জেল না দিয়ে জরিমানা করাতে এলাকার মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে, অপরাধীর একজনের ৫ হাজার টাকা ও ৪ জনের ২০ হাজার টাকা করা জরিমানা করা হয়েছে। আগামী দিন আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে সোনাইমুড়িতে, যেখানে একজন নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করার মত এত অপরাধ করেও সামান্য জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার জানিয়েছেন, তার স্বাক্ষর জাল করে জন্ম নিবন্ধন তৈরি করায় ৪ যুবককে আটক করা হয়েছিল এবং তাদের জরিমানা করা হয়েছে।

 

তিনি জানান, সোনাইমুড়ী বাজারের কম্পিউটার দোকানগুলোর মালিকরা ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরির সঙ্গে জড়িত এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।